মহান মে দিবস

চট্টগ্রামে হাত গুটিয়ে বসে আছে আড়াই লাখ পরিবহন শ্রমিক

Passenger Voice    |    ১১:০৯ এএম, ২০২১-০৫-০২


চট্টগ্রামে হাত গুটিয়ে বসে আছে আড়াই লাখ পরিবহন শ্রমিক

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ দেশের বেসরকারি খাতে যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক যানবাহনের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। শ্রমজীবী মানুষের একটি বড় অংশ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বেসরকারি পরিবহনখাতে নিয়োজিত রয়েছে। দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) আট শতাংশ যোগান দেয় এই পরিবহন সেক্টর। জাতীয় অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে এই পরিবহন শিল্প। এই শিল্পের ১০ শতাংশ শ্রমিক মাসিক বেতনে কাজ করলেও এখনও ৯০ শতাংশ শ্রমিক দৈনিক চুক্তি ভিক্তিক কাজ করে জিবিকা নিবাহ করে থাকে। পরিবহন শ্রমিক সংগঠন গুলোর দেয়া তথ্য মতে চট্টগ্রামে ২ লাখ ৪৭ হাজার পরিবহন শ্রমিক রয়েছে। তাদের মধ্যে সিএনজি অটোরিকশার চালক রয়েছে প্রায় ৪০ হাজার, কার-মাইক্রো-এ্যাম্বুলেন্স, টেম্পু ও টেক্সিক্যাবের চালক-শ্রমিক রয়েছে প্রায় ১ লাখের মতো, এছাড়া বাস-মিনিবাসের চালক-শ্রমিক রয়েছে প্রায় ২১ হাজার, ট্রাক-কাভার্ডভ্যান এর চালক শ্রমিক রয়েছে প্রায় ৩৯ হাজার, প্রাইমভার চালক-শ্রমিক রয়েছে ১৮ হাজার, ট্যাংকলরি চালক-শ্রমিক রয়েছে ৩ হাজার।

এদিকে আজ মহান মে দিবস উপলক্ষে শ্রমিকদের করোনাকালে জীবন যাপন ও চলমান পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে বৃহত্তর চট্টগ্রাম সড়ক পরিবহন শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব উজ্জল বিশ্বাস চট্টগ্রাম  বলেন, চট্টগ্রামে পরিবহন সেক্টরের শ্রমিকরা সব সময় তাদের অধিকার নিয়ে আন্দোলন সংগ্রাম করলেও এখনও চট্টগ্রামে তাদের ন্যায্য অধিকার বাস্তবায়ন করা হয়নি। করোনার কারনে দীর্ঘ সময় গণপরিবহন বন্ধ রাখা হয়েছে এতে কর্মহীন হয়ে পড়েছে প্রায় আড়াই লাখ পরিবহন শ্রমিক। খাবারের অভাবে টানাপোড়ন চলছে দৈনিক চুক্তি ভিত্তিক কাজ করা পরিবহন শ্রমিকদের সংসারে, এক বেলা চুলায় হাঁড়ি উঠলে অন্য বেলা উঠে না এমন দূর্বিষয় জীবন দেখার কেউ নেই।

গণপরিবহন শ্রমিকরা করোনার সবচেয়ে ঝুঁকিতে কাজ করে থাকে মহান মে দিবস উপলক্ষে আমরা সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছি করোনার টিকা প্রদানে পরিবহন শ্রমিকদের যেন অগ্রাধিকার দেয়া হয়। এছাড়া পরিবহন শ্রমিকরা করোনায় সংক্রমিত হলে সরকারী খরচে তাদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতের দাবী জানাচ্ছি আমরা। 
পরিবহন শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে বর্তমান সরকার গত বছরের ২৭ জুলাই  পরিবহন শ্রমিকদের বেতন নির্ধারণ করে মন্জুরী কমিশন গঠন করেছে। কিন্তু প্রায় এক বছর পার হলেও এখনও তা কার্যকর করতে পারেনি সরকার। পরিবহন মালিকদের কাছ থেকে এখনও নিয়োগপত্র দেয়া হয়নি, এখনও মানা হয়না শ্রমিকের কর্মঘন্টা। মহাসড়ক গুলোতে রাখা হয়নি চালক-শ্রমিকের বিশ্রামাগার, সড়ক দুর্ঘটনার প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য ট্রমা সেন্টার তৈরি হলেও চিকিৎসার জন্য ডাক্তার নার্স নেই।

অন্যদিকে পরিবহন শ্রমিকদের জন্য রয়েছে প্রতিদিন পুলিশের হয়রানী। এবিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করে চট্টগ্রাম প্রাইমমোভার ট্রেইলার শ্রমিক ইউনিয়ন এর কার্যকরী সভাপতি মোহাম্মদ জামাল চট্টগ্রাম বলেন, করোনার এই মহামারিতে পণ্য পরিবহন সেবা চালু থাকলেও আমাদের চালক-শ্রমিকরা বাসা থেকে ডিপো পর্যন্ত আসতে প্রতিদিন গণপরিবহন সমস্যায় পরে। এছাড়া রয়েছে পুলিশের হয়রানী। বন্দরে প্রবেশের পাস দেখানোর পরেও আমাদের চালক শ্রমিকদের বিভিন্ন ভাবে হয়রানী করে থাকে। মহান মে দিবেসে আমরা পুলিশের হয়রানী থেকে মুক্তি চাই।

ঢাকা-চট্টগ্রাম সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিক ঐক্য পরিষদের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সদস্য সচিব মোহাম্মদ ফারুক হোসেন বলেন, সিএনজি অটোরিকশার চালকদের কোন নিয়োগপত্র নেই। তারা সারাবছর গাড়ী চালিয়ে মালিকের জমা দিয়ে বাকী টাকা দিয়ে তাদেও সংসার চালায়। কিন্তু করোনার এই মহামারিতে অসহায় পরিবহন শ্রমিকদেও জন্য আমরা সরকারের কাছে ১০ টাকা কেজিতে চাল চেয়েছিলাম। কিন্তু তাও আমরা পায়নি। সরকারের পক্ষ থেকে কোন ধরনের ত্রানের ব্যবস্থাও করা হয়নি। সিএনজি অটোরিকশার চালকরা সন্তাান-সংসার নিয়ে ছোট একটা বাসায় চট্টগ্রামে বসবাস করে। প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা ঘর ভাড়া দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। 

কারণ অন্যান্য মাসে সিএনজি চালিয়ে চালকরা অনায়াসে ১৫ থেকে ১৮ হাজার টাকা আয় করেন। এখন লকডাউনে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত চালকরা। ফারুক হোসেন বলেন, ‘লকডাউন’ কি শুধু আমাদের জন্য। প্রাইভেটকার-মাইক্রো চলতে পারলে আমাদের হাত পা কেন বাঁধা হয়েছে। সরকারের কাছে অনুরোধ স্বাস্থ্যবিধি মেনে সিএনজি অটোরিকশা চালানোর অনুমতি দিক। না হলে সামনে ঈদে পরিবারের সামনে দাঁড়াতে পারবো না কোন সিএনজি চালক। জীবনে কখনও কারোর কাছে হাত পাততে হয়নি চালকদের। কিন্তু এখন অসহায় হয়ে পড়েছে। আমাদের উপর এত জুলুম কেন?

অন্যদিকে চলমান ‘লকডাউনে’ মানবেতর জীবন যাপন করছে সড়ক ও নৌ পরিবহনে কর্মরত হাজারোও শ্রমিক।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) পরিচালিত বেসরকারি বাণিজ্যিক যান্ত্রিক এবং অযান্ত্রিক সড়ক ও নৌ যান জরিপে দেখা গেছে, ৩১ লাখ ৬১ হাজার ১১৭ জন পরিবহন শ্রমিক রয়েছেন। দেশের পরিবহন খাতে নৌ পরিবহনে কর্মরত রয়েছেন ৩ লাখ ৩ হাজার ৭৮৮ জন শ্রমিক। অন্যদিকে সড়ক পরিবহনে কর্মরত ২৮ লাখ ৫৭ হাজার ৩২৯ জন শ্রমিক।

এদিকে লকডাউনে বিপাকে পড়েছে চট্টগ্রামের প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার রিকশা ও ভ্যানচালক। ১৫ হাজার মোটরসাইকেল চালক যারা রাইড শেয়ারিং করে জীবন চালিয়ে নেয়। 
এই বিষয়ে হালকাযান শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আনোয়ার হোসেন চট্টগ্রাম বলেন, এইবারের মহান মে দিবেসে শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার প্রদানে সরকারকে গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ নিতে হবে। করোনার এই মহামারিতে পরিবহন শ্রমিকদের জন্য নূন্যতম খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে দ্রæত গণপরিবহন চালুর দাবী করেন এই পরিবহন নেতা।